নিখোঁজের তিন দিন পর ম্যানহোল থেকে নারীকে জীবিত উদ্ধার
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহে নিখোঁজের তিন দিন পর ম্যানহোল থেকে নিলুফার ইয়াসমিন (৩৮) নামে এক নারীকে উদ্ধারে করা হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে নগরীর জেলাখানা রোড এলাকার ম্যানহোল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার নারীকে উদ্ধার করা হলেও ঘটনাটি জানাজানি হয় গত রোববার রাতে। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আলোচনা-সমালোচনা। বলা হচ্ছে, সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন সড়কেই মাদকসেবীরা ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করে নিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ঢাকনা না থাকলেও সিটি করপোরেশন ঢাকনা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে পথচারীরা আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হওয়া নিলুফার ইয়াসমিন মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি নগরীর গলগন্ডা জেল রোড এলাকায় মো. লিয়াকত আলীর মেয়ে। ১২ নভেম্বর সকালে ওই নারী বাড়ি থেকে বের হন। পরে রাতে আর ফেরেননি। তখন তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন এলাকায় ও আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ নেন। কোথাও খোঁজ না পেয়ে পরদিন ১৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ১৫ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে ম্যানহোল থেকে নারী চিৎকারের শব্দ কানে আসে রিকশা চালক মো. রোমান মিয়ার। পরে আরেক রিকশাচালক ও স্থানীয়দের সহায়তায় নারীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারী রিকশা চালক মো. রোমান মিয়া বলেন, এলাকাটি ময়মনসিংহ-টঙ্গাইল মহাসড়কের খুব কাছে হওয়ায় সারাক্ষণই গাড়ির শব্দ থাকে। এছাড়া ম্যানহোলের কাছে দোকান ও একটি ওয়ার্কশপ থাকায় শব্দের কারণে এতদিন হয়তো কেউ নারীর আওয়াজ শুনতে পায়নি। রাতে ওই নারীকে উদ্ধারের পর প্রথমে পরিচয় জানা যায়নি। তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। তার সারা শরীর ফ্যাকাশে ছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ ও তার স্ত্রী নারীকে তাদের বাসায় নিয়ে যান। বাসায় নেওয়ার পর তার স্ত্রী তাকে প্রথমে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে পোশাক পরান। তারপর তাকে কিছু খেতে বলা হলেও তিনি খাননি। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় নিজের পরিচয়ও বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ঢাকনা দেওয়া যে ম্যানহোলের নিচ থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে তা থেকে আনুমানিক ৫০ ফুট দূরের অপর একটি ম্যানহোলের ঢাকনা ছিল না অনেক দিন ধরেই। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী ঢাকনা না থাকা ম্যানহোলে পড়ে গিয়েছিলেন। মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমার বাসায় নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি তাকে চিনতে পারেন। এরপর ওই নারীকে তার বাবার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। নিলুফার বাবা মো. লিয়াকত আলী জানান, তার মেয়ে উচ্চশিক্ষিত। তবে ২০১৩ সালে একটা দুর্ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রায়ই সারা দিনের জন্য বাইরে চলে যান। তবে রাতে ঠিকই বাড়িতে ফিরে আসেন। গত বুধবার রাতে না ফেরায় থানায় জিডি করা হয়। সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রায় রাস্তায় ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। এ নিয়ে বারবার কথা বলছি, কর্তৃপক্ষের টনক নাড়ে না, ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, এর দায়ভার সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে। সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ঘটনাটি জানা নেই। তবে মাদকসেবীরা মাঝেমধ্যেই ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করে বিক্রি করে দেয়। যেসব রাস্তায় ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়েছে, সেখানে ঢাকনা লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া এক নারীকে তিন দিন পর উদ্ধার করার ঘটনাটি জানতে পেরেছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ম্যানহোলের ঢাকনা চোরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ